তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, বৈরি আবহাওয়া, পাহাড়ি জমি ক্রমেই কমে আসা প্রভৃতি কারণে সিলেটে কমলার উৎপাদন কমতে থাকে। ফলে চীন, ভারত, ভুটান, নেপালসহ বিদেশের কমলা বাজার দখল করে নেয়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, সিলেট অঞ্চলে কমলা চাষ বাড়াতে ২০০১ সালে ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আট বছরের ওই প্রকল্প শেষে এই অঞ্চলে কমলার চাষ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে এরপর বন্ধ হয়ে যায় কমলা চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ। ১১ বছর পর আবার সিলেটের কমলার প্রতি মনোযোগী হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। নেয়া হয় পাঁচবছর মেয়াদী আরেকটি প্রকল্প। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় প্রকল্পও সফল হলে সিলেটের কমলার সুদিন আবার ফিরে আসবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে আট বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে চার জেলায় ২৫০টি বাগান করা হয়। এছাড়া পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ২০০১ সালে সিলেট বিভাগে যেখানে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হতো, সেখানে ওই প্রকল্পের ফলে বর্তমানে কমলা চাষ হচ্ছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। ২০০৮ সালে কৃষকদের দাবি সত্ত্বেও ওই প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। দীর্ঘদিন এনিয়ে কোনো উদ্যোগও ছিলো না। ফলে আবার নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন চাষিরা।
গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের গৌরাবাড়ি গ্রামের কমলা চাষি গুণেন্দ্র দেব জানান, আমার বাগানে প্রায় একশ’টির মতো গাছ রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছি। সরকারি প্রণোদনা বা ঋণের সুবিধা পেলে বাগানে আরও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।’
তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে একদিন এসে বাগানটি দেখে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি। এখন কমলা চাষে সহযোগিতার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর এ অঞ্চলে কমলা চাষ বৃদ্ধিতে আবার উদ্যোগী হয়েছে সরকার।
২০১৯ সালে কমলাসহ সিলেট অঞ্চলের লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’ নামে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৯ উপজেলায় কমলার উৎপাদন বাড়াতে কাজ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া এই ৯ উপজেলায় প্রকল্পের কাজ চলবে। এসব উপজেলায়ই কমলাসহ লেবু জাতীয় ফল সবচেয়ে বেশি ফলন হয়।
কমলা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কমলার নতুন বাগান সৃষ্টি, পুরাতন বাগান ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের কৃষকরা।
এ লক্ষ্য পূরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তারা। এছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজারের দুই হার্টিকালচার সেন্টারে উন্নতমানের চারা উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক সিলেট এম এম ইলিয়াস বলেন, সিলেট অঞ্চলে কমলার উৎপাদন বাড়াতে আগের প্রকল্পে অনেক সুফল মিলেছে। এরপর দীর্ঘদিন এ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নতুন প্রকল্পে কমলার সাথে লেবু জাতীয় অন্যান্য ফল উৎপাদন বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, এখনও চেষ্টা করলে সিলেটের কমলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চাষিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়া প্রত্যেকের বসতবাড়িতে কমলার চারা রোপণের আহ্বান জানান তিনি।